ট্রমা এক ধরনের মনোদৈহিক চাপ-জনিত ঘটনা। কোনো অনাকাঙ্খিত ভয়াবহ ঘটনার অভিজ্ঞতা, যা প্রত্যক্ষদর্শীর মনে ট্রমা-র সঞ্চার করতে পারে কিংবা তার অস্তিত্বের জন্য হুমকি হতে পারে এমন কোন ঘটনা থেকে পরবর্তীতে এই ট্রমা সৃষ্টি হতে পারে। একে ‘পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডার’ বা সংক্ষেপে ‘পিটিএসডি’ বলা হয় ।
উদাহরণ স্বরূপ- শারীরিক বা যৌন নির্যাতন, মারাত্মক দুর্ঘটনা, যুদ্ধ-সংঘাত বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের উল্লেখ করা যেতে পারে। পিটিএসডি মানসিক রোগের পরিভাষায় উদ্বেগজনিত রোগের অন্তর্গত।ট্রমা বা মানসিক আঘাত আমাদের জীবনে কোন না কোন মূহুর্তে এসে থাকে। আমাদের মধ্যে কেউ কেউ মানসিকভাবে শক্ত থাকেন তাই কাটিয়ে উঠতে পারেন, আর কেউ কেউ মানসিকভাবে শক্ত না থাকায় ট্রমা কাটিয়ে উঠতে পারেন না।
♦️ মেন্টাল ট্রমা বা মানসিক আঘাত আসলে কী?
ট্রমা হচ্ছে আমাদের এক ধরণের ইমোশনাল রেসপন্স কোন বিশেষ ইভেন্ট বা ঘটনা কে কেন্দ্র করে। হতে পারে উক্ত ঘটনার সাথে বা উক্ত পরিবেশের সাথে আমাদের খারাপ মূহুর্ত কেটেছে বা মনে ভীতি জন্মেছে। অ্যামেরিকান সাইক্রিয়াটিক এসোসিয়েশন ট্রমা কে সংজ্ঞায়িত করেছে এভাবে, “… কোন বিশেষ ঘটনার উপর আমাদের ইমোশনাল রেসপন্স হচ্ছে ট্রমা”
💠 মেন্টাল ট্রমার কারণসমূহ:
✔️ যৌন, শারীরিক বা মানসিক নির্যাতন
✔️ প্রিয়জনের মৃত্যু বা হারানো
✔️ গৃহহীনতা বা যুদ্ধ অভিজ্ঞতা
✔️ প্রাকৃতিক দুর্যোগ (যেমন ভূমিকম্প, বন্যা)
✔️ মারাত্মক দুর্ঘটনা (যেমন সড়ক দুর্ঘটনা)
⭕ লক্ষণসমূহ:
✅ হতাশা, উদ্বেগ, আতঙ্ক বা প্যানিক অ্যাটাক
✅ ঘুমের সমস্যা বা দুঃস্বপ্ন
✅ নির্ভরযোগ্য ব্যক্তিদের থেকেও বিচ্ছিন্নতা অনুভব
✅ অতিরিক্ত সতর্কতা বা "হাইপারঅ্যাওয়ারনেস"
✅ স্বাভাবিক কাজকর্মে আগ্রহহীনতা
🔴 প্রভাব:
মানসিক ট্রমা untreated থাকলে তা পোস্ট-ট্রম্যাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডার (PTSD), অবসাদ, আত্মহত্যার চিন্তা বা আসক্তির মতো গুরুতর সমস্যায় রূপ নিতে পারে। অনেক সময় শিশুকালে প্রাপ্ত ট্রমার প্রভাব প্রাপ্তবয়স্ক জীবনেও রয়ে যায়।
যদি নিচের যেকোনো একটি লক্ষণ দীর্ঘস্থায়ী হয়:
↘️ দুঃস্বপ্ন বা ফ্ল্যাশব্যাক
↘️ আত্মহত্যার চিন্তা
↘️ মাদক বা অ্যালকোহলের প্রতি নির্ভরতা বেড়ে গেলে
↘️ সামাজিক বিচ্ছিন্নতা বা সম্পর্কহীনতা
🩺 চিকিৎসা ও সহায়তা:
🔹 সাইকোথেরাপি (যেমন: Cognitive Behavioral Therapy, EMDR Therapy)
🔹 মেডিকেশন (প্রয়োজনে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শে)।
🔹 পরিবার ও বন্ধুদের সহানুভূতিশীল সমর্থন।বন্ধু বা পরিবারের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলা আত্মিক শান্তি দেয়।একাকিত্ব দূর করে।
🔹 সেলফ-কেয়ার এবং রিলাক্সেশন টেকনিক (মেডিটেশন, যোগব্যায়াম)।
🔹মুক্তবাতাসপূর্ণ স্থানে সময় কাটানো।গাছপালা, সবুজ পরিবেশ বা সমুদ্রের ধারে সময় কাটানো মানসিক শান্তি দেয়।
🔹 সঙ্গীত থেরাপি (Music Therapy)
শান্ত ধরণের সঙ্গীত মানসিক যন্ত্রণাকে হালকা করে।আবেগ প্রকাশে সাহায্য করে।
🔹 লেখালেখি ও ডায়েরি রাখা (Journaling)
নিজের ভাবনা ও আবেগ প্রকাশ করতে সাহায্য করে। এতে করে ট্রমার বিষয়গুলোও কিছুটা ভুলে থাকা যায়।
🔹 পর্যাপ্ত ঘুম ও সুষম খাদ্যাভ্যাস। পর্যাপ্ত ঘুম স্নায়ু শান্ত রাখে এবং শরীরে ইতিবাচক শক্তি আনে।
মানসিক ট্রমা একটি গুরুতর মানসিক অবস্থা হলেও উপযুক্ত সহায়তা ও চিকিৎসার মাধ্যমে এটি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। সমাজে মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলা এবং ট্রমাগ্রস্ত ব্যক্তিদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া অত্যন্ত জরুরি।
---
♻️ রেফারেন্স:
1. American Psychiatric Association. (2013). Diagnostic and Statistical Manual of Mental Disorders (5th ed.).
2. National Institute of Mental Health (NIMH). (2023).
3. WHO. (2022). Mental Health and COVID-19: Early evidence of the pandemic’s impact. World Health Organization.
Jobida Noor
Content writer